রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মুসলিম জীবনে হিজরি সনের প্রয়োজনীয়তা

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ:
চান্দ্রবর্ষ ও চান্দ্রমাসের প্রভাব মুসলমানদের জীবনে ব্যাপক। জীবনের সবক্ষেত্রেই এর প্রভাব ও গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষত ইবাদত-বন্দেগির তারিখ, ক্ষণ ও মৌসুম নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণে হিজরি সনের হিসাব স্মরণ রাখা মুসলমানদের জন্য জরুরি। যেমন রমজানের রোজা, দুই ঈদ, হজ, জাকাত ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে হিজরি সন ধরেই আমল করতে হয়। রোজা রাখতে হয় চাঁদ দেখে, ঈদ করতে হয় চাঁদ দেখে। এভাবে অন্যান্য আমলও। এমনকি স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের ইদ্দতের ক্ষেত্রগুলোতেও চান্দ্রবর্ষের হিসাব গণনা করতে হয়। অর্থাৎ মুসলমানদের ধর্মীয় কতগুলো দিন-তারিখের হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্র রয়েছে, সেগুলোতে চাঁদের হিসাবে দিন, তারিখ, মাস ও বছর হিসাব করা আবশ্যকীয়।

চান্দ্রবর্ষের হিসাব মেলালে দেখা যায়, একটি ইবাদতের মৌসুম কয়েক বছরের ব্যবধানে শীত-গরম-বর্ষায় পরিবর্তিত হতে থাকে। সৌরবর্ষের হিসাবে এটা হয় না। এতে রয়েছে বিশাল হেকমত। কারণ, ইসলাম হচ্ছে স্বভাব অনুকূল ধর্ম। ইসলামের বিধিবিধান এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শহুরে-গ্রাম্য, সমতলবাসী বা পাহাড়ি, তথ্য ও প্রযুক্তির সুবিধাপ্রাপ্ত ও বঞ্চিত সবাই যেন স্বাচ্ছন্দ্যে আল্লাহর বিধিবিধানগুলো পালন করতে পারে। চাঁদের মাস ও বছরের হিসাবেই সহজে এটা করতে পারা যায়। জ্যোতির্বিদ্যা বা আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য যাদের কাছে থাকে না তারাও চাঁদ দেখে স্বাচ্ছন্দ্যে এ বিধানগুলো পালন করতে পারে। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, চান্দ্রবর্ষের হিসাব অনুযায়ী হওয়ায় একটি ইবাদত বিভিন্ন মৌসুমে পালনের সুযোগ মুসলমানরা পান। কখনো রোজা ছোট দিনের হয়, কখনো দীর্ঘ দিনের। কখনো ঈদ ও হজ হয় শীতকালে, কখনো গ্রীষ্মকালে। মৌসুমের এই বৈচিত্র্যের কারণে মুসলমানরা একটি ইবাদত বা উৎসব আল্লাহর দেওয়া সব ক’টি মৌসুমেই পালন করতে পারেন।

আরেকটি বিষয়, শুধু হিজরি সন নয়, হিজরি সনের মাসগুলোর তারিখ ব্যবহারে ও চর্চায় রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কর্তব্য। মুসলমানদের হিসাব-নিকাশগুলো হিজরি তারিখ উল্লেখ করেই করা উচিত। অন্য সনের হিসাব অনুগামী হিসেবে আসতে পারে।

মনে রাখতে হবে, ইসলামি তারিখ বা চান্দ্রবর্ষের হিসাব রক্ষা করা মুসলমানদের জন্য ফরজে কেফায়া। এ কথা মনে করার কোনোই অবকাশ নেই যে, হিজরি সনটি আসলে আরবি বা আরবদের একটি সন; বরং এটি মুসলমানদের সন এবং ইসলামি সন। এক্ষেত্রে শুধু একটা চাঁদ দেখা কমিটি করে একটি মুসলিম রাষ্ট্রের দায়িত্ব পুরোপুরি পালিত হয় না। বরং সব মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রের উচিত, তাদের স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা বজায় রেখে হিজরি সনকে প্রাধান্য দেওয়া। এক্ষেত্রে ওআইসি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রত্যেক মুসলিম রাষ্ট্রও এটা করতে পারে। অনেক মুসলিম রাষ্ট্রে এর নজিরও আছে।

কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন, চাঁদ দেখা নয়- গণনার ভিত্তিতে হিজরি সনের হিসাব রাখা এবং এজন্য স্থায়ী হিজরি ক্যালেন্ডার বানানোর উদ্যোগ নেওয়া যায়। কিন্তু কথাটি যৌক্তিক নয়। কারণ গণনার ভিত্তিতে হিজরি ক্যালেন্ডার করার বিষয়টির আসলে দুটি রূপ হতে পারে। একটি হচ্ছে, সৌরবর্ষের মতো হিজরি সনেরও ১২টি মাস এবং প্রতি মাসের দিন ২৯/৩০ হওয়ার হিসাব করা (যা এখন প্রচলিত আছে) এভাবে ক্যালেন্ডার করা দোষেয় নয়। তবে সেখানে উল্লেখ থাকতে হবে, এটি চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। অনেক আরব দেশেও এ জাতীয় ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে চাঁদ দেখার ভিত্তিতে বেশ-কম হলে তারা ক্যালেন্ডার সংশোধন করে নেন।

আরেকটি রূপ হচ্ছে, চাঁদ না দেখেই গণনার ভিত্তিতে নিশ্চয়তার সঙ্গে অগ্রিম বলে দেওয়া যে, এবার অমুক মাসের এক তারিখ অমুক বারে হবে। এ চিন্তাটা ভুল। শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। কোরআন মাজিদের বিভিন্ন স্থানে চান্দ্রমাসের কথা উল্লেখ হয়েছে এবং সেগুলোকে গণনার মাধ্যম হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এখানে ‘গণনার মাধ্যম’ বলার উদ্দেশ্য প্রথম রূপটি। অর্থাৎ সৌরবর্ষ যেমন গণনার মাধ্যম চান্দ্রবর্ষও সেভাবে গণনার মাধ্যম। কোরআন মাজিদের মৌলিক জ্ঞান না থাকার কারণে কেউ কেউ ওই শব্দগুলোর দ্বারা এ কথা বুঝে নিয়েছে যে, চাঁদ দেখার বিষয়ে নিশ্চিত না হয়েও হিজরি বর্ষের প্রত্যেক মাসের প্রথম তারিখ ও শেষ তারিখ নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করে হিজরি ক্যালেন্ডার বানিয়ে নেওয়া উচিত। অথচ হিজরি মাসের বিষয়টি যে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল তা একটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। হজরত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ইফতার করো। -সহিহ বোখারি : ১৯০৯

কোরআন মাজিদেও হজের বিষয়কে চাঁদের ওপর নির্ভরশীল ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি হাজার বছর ধরে মুসলমানদের মধ্যে মীমাংসিত। সুতরাং এ বিষয়ে নতুন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ নেই।

বর্তমানে একটি মহল বিশ্বব্যাপী একদিনে ঈদ পালন ও একসঙ্গে রোজা রাখার দাবি তুলেছে। এ দেশের কিছু কিছু গ্রামে তা পালিতও হচ্ছে- এগুলো অনৈক্যের নিদর্শন।

সাহাবায়ে কেরামের যুগে ইসলাম যখন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল তখনো ভিন্ন ভিন্ন এলাকা ভেদে ঈদ ও রোজার দিন ভিন্ন হয়েছে। সিরিয়া ও মদিনায় একই দিনে ঈদ হয়নি। হাদিসের কিতাবে এ বিষয়ে আলাদা একটি অধ্যায় রয়েছে। সুতরাং পুরো বিশ্বে একই দিনে রোজা ও ঈদ করার নামে দেশের কোনো কোনো গ্রামে অগ্রিম রোজা বা ঈদ করে ফেলা ঐক্যের নামে অনৈক্যেরই একটি নিদর্শন। তবে এসব বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি বা পরস্পর তিক্ততার সৃষ্টি করা কিছুতেই কাম্য নয়।

মনে রাখতে হবে যে, মুসলমানদের মূল সৌন্দর্য এবং ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে শরিয়তের অনুসরণের মধ্যে। পুরো পৃথিবীতে একই দিনে রোজা ও ঈদ করা জরুরি কোনো বিষয় নয়। যেমনিভাবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বিভিন্ন সময়ে পড়ে থাকে। যেমন আপনি যখন ফজর পড়ছেন জাপানে তা পড়া হয়ে গেছে আরও ৩ ঘণ্টা আগে। আর সৌদি আরবে তা পড়া হবে ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে। এতে তো কোনো অনৈক্য সৃষ্টি হয় না।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION